বছরখানেক আগে চিকুনগুনিয়া ছিল এক প্রকারের ট্রেন্ডিং টপিক। রেকর্ড পরিমাণ মানুষ চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল। এছাড়াও প্রতিবছর ডেঙ্গুতে প্রচুর মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। এটি ঠেকাতে জন্য প্রয়োজন সচেতনতা।
চিকুনগুনিয়া এবং ডেঙ্গু উভয় রোগের জন্য দায়ী মশা। তবে সকল মশা না, এডিস মশা। একটু ভুল বললাম। মশা কাউকে আক্রমণ করে না। শুধুমাত্র স্ত্রী মশা বা মশকী মানুষ ও অন্যান্য প্রাণিদের আক্রমণ করে থাকে। আর মশা বা মশকী কামড়াতে পারে না কাউকে। মূল এর মাথায় অবস্থিত অ্যান্টেনা বা শুঙ্গটি দিয়ে প্রাণি দেহ থেকে রক্ত শুষে নেয়। আমাদের অবশ্যই ভয়াবহ এডিস মশা চেনার উপায়সহ ডেঙ্গু জীবাণু বহনকারী এ মশা ও রোগ সম্পর্কে আমাদের জেনে রাখা উচিৎ।
এডিস মশা চেনার উপায়
এডিস মশা খুব সহজেই খালি চোখে চেনা যায়। এর কিছু বৈশিষ্ট্য:
১. মশার দেহে সাদা-কালো ডোরাকাটা দাগ থাকে। এটিই চেনার প্রধান উপায়।
২. মশার অ্যান্টেনা বা শুঙ্গ কিছুটা লোমশ দেখতে হয়।
৩. মশার আকার মাঝারি ধরনের হয়।
এডিস মশা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু বিষয়ক কর্মসূচির ব্যবস্থাপক এম. এম. আখতারুজ্জামান।
এডিস মশার বংশ বিস্তার
অন্যান্য মশা যেখানে ময়লা পানিতে ডিম পেড়ে বংশ বিস্তার করে থাকে, সেখানে এডিস মশা শুধুমাত্র পরিস্কার পানিতেই ডিম পাড়ে। তবে সেক্ষেত্রে শর্ত হল পানি অন্তত সপ্তাহখানেক বা কাছাকাছি সময় ধরে জমে থাকতে হবে। অর্থাৎ একদম একদিনের মধ্যে রেখে দেয়া পানিতে এ মশা ডিম পাড়বে না। আরো একটি শর্ত হল, পানি বদ্ধ হতে হবে।
এডিস মশা যে সময় কামড়ায়
অন্যান্য মশা দিন ও রাতের যেকোনো সময়ে কামড়ালেও এডিস মশা শুধুমাত্র দিনের আলো থাকাকালীন কামড়ায়। অর্থাৎ, সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত এডিস মশা কামড়ায়। তবে কামড়ানোর হার সবচেয়ে বেশি থাকে সূর্যোদয়ের পর দুই-তিন ঘণ্টা এবং সূর্যাস্তের আগের কয়েক ঘণ্টা। এবং রাতে এডিস মশা কামড়ায় না।
এডিস মশা একবার কামড়ালেই ডেঙ্গু হয় কি না
এডিস মশার এক কামড়েই আপনি ডেঙ্গু রোগী হবেন কিনা তা বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে।
এডিস মশা কামড়ালে যে মানুষের ডেঙ্গুজ্বর হবেই, বিষয়টি এমন নয়। পরিবেশে উপস্থিত ভাইরাস এডিস মশার মধ্যে সংক্রমিত হলে সেই মশার কামড়ে ডেঙ্গু হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
এডিস মশা ভাইরাস সংক্রমিত থাকা অবস্থায় মানুষকে কামড়ালে সুস্থ মানুষের ডেঙ্গু হতে পারে। ভাইরাসের কারণে হওয়া জ্বরে আক্রান্ত থাকা ব্যক্তিকে এডিস মশা কামড়ালেও মশার মধ্যে ভাইরাস সংক্রমণ হওয়ার সুযোগ থাকে।
আসলে এডিস মশার একটা বিষয় হলো, তারা সাধারণত একাধিক ব্যক্তিকে কামড়ায়। তাই ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির শরীর থেকে এডিস মশার মধ্যে ভাইরাস সংক্রমণ হওয়ার পর ওই মশার কামড়ে ডেঙ্গু হয়।
প্রতিরোধ ব্যবস্থা
এডিস মশা থেকে বাঁচতে নিজেদের কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যেমন:
১. কোথাও পরিষ্কার পানি জমিয়ে রাখা যাবে না।
২. গাছের টবে যেন পানি জমে না থাকে খেয়াল রাখতে হবে।
৩. ঝোপঝাড় পরিষ্কার রাখতে হবে।
৪. যখন এডিস মশার প্রকোপ দেখা যাবে তখন দিনের শুরুতে এবং সন্ধ্যায় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে। সম্ভব হলে পুরো দিনই মশারি রাখতে হবে।
৫. বাড়ির সকল জায়গা প্রতিদিন পরিষ্কার রাখতে হবে, যাতে অন্ধকারে মশাগুলো দলবেঁধে অবস্থান না নেয়।
৭. নিয়মিত মশার ঔষধ বা অ্যারোসল ব্যবহার করতে হবে।
সকলে সচেতন হলে অনেকটা সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে বলে আশা করি।