বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত টপিক হচ্ছে করোনা ভাইরাস। যার একটি প্রজাতি হল ২০১৯-এনকোভি (2019-NCOVI), যা নভেল করোনা ভাইরাস (Novel Corona Virus) এর সংক্ষিপ্ত রূপ। মহামারী সৃষ্টি করা এই ভাইরাসটি সম্পূর্ণ নতুন হওয়ায় ভ্যাকসিনের অভাবে মৃত্যু হয় গেছে এখন পর্যন্ত ৩০ হাজারের কাছাকাছি মানুষের! তো, চলুন জেনে নেয়া যাক এ সমন্ধে বিস্তারিত।
করোনা ভাইরাস ও কোভিড-১৯ কি?
করোনা এক প্রকারের সংক্রামক ভাইরাস। ইতিপূর্বে মোট ৬ প্রজাতির সংক্রামক করোনা ভাইরাস ছিল। নতুন এই ২০১৯-এনকোভি আসার ফলে এটি ৭-এ এসে দাঁড়িয়েছে।
করোনা ভাইরাস নতুন কিছু নয়। চীনে এটি আরো আগেই (২০০২ সালে) তাণ্ডব চালিয়েছে সার্স (SARS) বা সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম নামক একটি মহামারী রোগের মাধ্যমে।
তো করোনার প্রজাতি ২০১৯-এনকোভি থেকে সৃষ্ট রোগের নাম দেয়া হয়েছে কোভিড-১৯ (COVID-19), যা করোনা ভাইরাস ডিজিজ (Corona Virus Disease) এর সংক্ষিপ্ত রূপ।
কোভিড-১৯ এর লক্ষণ কি কি?
১. জ্বর
২. কাশি
৩. সর্দি
৪. শ্বাস কষ্ট
৫. গলা ব্যথা
৬. মাথা ব্যথা
৭. নিউমোনিয়া
এগুলো সবচেয়ে বেশি প্রকাশিত লক্ষণ। সাধারণত আক্রান্ত রোগীর শুরুতে জ্বর দিয়ে শুরু হয়। তারপর শুকনো কাশি, সর্দি এসব লক্ষণ দেখা দেয়। এসবের প্রায় সপ্তাহ খানেক পর শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। মূলত এই ভাইরাসটি ফুসফুসে আঘাত করে বলে শ্বাসকষ্টের সমস্যা সৃষ্টি হয়। তবে গবেষণায় দেখা গেছে ১৭% রোগীর কোন লক্ষণই ছিল। সেজন্যই সকলের ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকা এবং এরপর টেস্ট করা জরুরি।
কোভিড-১৯ এ কারা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ?
যাদের বয়স ৫০+ এবং যাদের শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা (ইমিউনিটি সিস্টেম) দুর্বল কিংবা যারা বেশি রোগাক্রান্ত, তারা কোভিড-১৯ এর সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে আছে। মৃত্যুহার সবচেয়ে কম ০-৩০ বছর বয়সী মানুষের। এরপরে বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে মৃত্যুহার বাড়ে।
কোয়ারেন্টিন কি?
সহজে বললে, করোনা ভাইরাসে যারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে, তাদেরকে সাময়িকভাবে বিচ্ছিন্ন করে রাখার ব্যবস্থাটিই কোয়ারেন্টিন। এক্ষেত্রে সেই ব্যক্তিকে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। কেননা কোভিড-১৯ এর লক্ষণ প্রকাশ পেতে মোটামুটি ১৪ দিন সময় লাগে।
এই ১৪ দিন সন্দেহজনক রোগীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা তিনি কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হলেও এই সময়টাতে লক্ষণ প্রকাশ না পাওয়ায় যত জনের সাথে মিলিত হবেন, ততজনের সাথেই ভাইরাসটি ছড়িয়ে যেতে পারে। সেজন্য এই সময়টাতে ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট জায়গায় আবদ্ধ থেকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
যদি কোয়ারেন্টিন চলাকালীন রোগের লক্ষণ দেখা যায় তবে তাকে আইসোলেশনে নেয়া হবে।
আইসোলেশন কি?
যদি কোন ব্যক্তি কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হন, তখন তাকে চিকিৎসার জন্য আইসোলেশনে নেয়া হয়। মনে রাখতে হবে, কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত মানেই মৃত্যু নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সুস্থ হয়ে উঠছে সবাই।
এক্ষেত্রে অনেকের প্রশ্ন থাকে, ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হলে চিকিৎসা কিভাবে হবে? মূলত এক্ষেত্রে ভ্যাকসিন দিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয় না। স্বাভাবিক চিকিৎসা দেয়া হয় উপসর্গগুলোর জন্য (জ্বর, ঠান্ডা, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া ইত্যাদির)।
মাস্কের ভূমিকা কি?
আমাদের দেশে যেসব মাস্ক প্রচলিত, তার একটিও কোভিড-১৯ এর জন্য উপযুক্ত না। কোভিড-১৯ থেকে বাঁচতে মূলত N95 মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। যেটি কিনা বাংলাদেশে পাওয়া যাচ্ছে না। হকাররা যেসব মাস্ক বিক্রি করছে, সেগুলো মানহীন এবং নিজেদের তৈরি নকল পণ্য।
তবে করোনা মোকামিলায় মাস্কের চেয়ে নিয়মকানুন মেনে চলাটা বেশি জরুরি।
আমাদের করণীয় কি?
১. লকডাউনের সময়টাতে ঘরেই থাকা।
২. বারবার সাবান, হ্যান্ডওয়াশ কিংবা স্যানিটাইজার ব্যবহার।
৩. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা।
৪. সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা।
৫. বাইরে গেলে মাস্ক ব্যবহার করা।
৬. রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকা।
৭. ইমিউনিটি সিস্টেম বাড়ানোর জন্য পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা।
ইত্যাদি।