ওয়েবসাইট জিনিসটা সম্মন্ধে প্রত্যেকেরই কম বেশি আগ্রহ আছে। তাই, আজকে ওয়েবসাইট কি এবং এর কার্যপ্রক্রিয়া নিয়ে বিষদ আলোচনা করব। ওয়েবসাইট কি যদি বলতে হয় তাহলে সহজে বলা যায়, আপনি এখন যে সিস্টেমটির সাহায্যে এই আর্টিকলটি পড়ছেন, এটাই ওয়েবসাইট।
কিন্তু সহজে জানলে আবার সমস্যা। কাউকে তো এভাবে বললে হবে না। একটু ফর্মালি বলি। ওয়েবসাইট আসলে ডোমেইন ও ওয়েব হোস্টিং এর সমন্বয়ে তৈরি হয়।
ওয়েবসাইট শব্দকে ভাঙলে পাই,
ওয়েব = ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব (www)
সাইট = জায়গা/নির্দিষ্ট স্থান
তাহলে এ থেকে একটা সুন্দর সংজ্ঞা দাঁড় করানো যেতেই পারে। ওয়েবসাইট হল ইন্টারনেটের একটা নির্দিষ্ট স্থান বা জায়গা। ইন্টারনেট দুনিয়া অনেক বিশাল। তারমধ্যে ছোট্ট একটা জায়গা হল Facebook, Google, Twitter, Ulkaa ইত্যাদি। তাহলে এদেরকে ওয়েবসাইট বলা যেতে পারে।
আচ্ছা, এবার তবে ওয়েবসাইট সম্মন্ধে জানার আগে ওয়েব ব্রাউজার সম্মন্ধে জানা যাক। ওয়েব ব্রাউজার হল এক প্রকারের অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার, যার দ্বারা আমরা যেকোনো ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারি। ওয়েব ব্রাউজারের কাজ হল ইউজারের প্রদত্ত ডেটা নির্দিষ্ট ওয়েব সার্ভারের নির্দিষ্ট লোকেশনে সেন্ড করা এবং তা থেকে প্রাপ্ত রেসপন্স আউটপুট হিসেবে দেখানো। এ কাজটা মোটেও সহজ নয়। এটা বুঝতে হলে নেটওয়ার্কিং বুঝতে হবে। আজ এটা নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনাই থাকুক 😛
যা বলছিলাম, এভাবেই ওয়েব ব্রাউজারগুলো আমাদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। কয়েকটি মোস্ট পপুলার ওয়েব ব্রাউজারের নাম: গুগল ক্রোম, মোজিলা ফায়ারফক্স, মাইক্রোসফট এজ, অপেরা ইত্যাদি। এতক্ষণ আমরা ওয়েবসাইটের বাইরের বিষয় সম্বন্ধে ব্যাসিক কিছু তথ্য এবং কনসেপ্ট জানলাম। এখন চলুন জানা যাক ওয়েবসাইটের ভেতরকার বিষয়গুলি। ভেতরকার বিষয়গুলি বলতে ওয়েবসাইট কিসের উপর ভিত্তি করে কাজ করে যাচ্ছে তা জানব।
ওয়েবসাইট মূলত দুইটা বিষয়ের উপর দাঁড়িয়ে কাজ করে:
১. ডোমেইন নেইম
২. হোস্টিং সার্ভার
এগুলো নিয়ে আরেকদিন বিস্তারিত আলোচনা করব (ইনশাআল্লাহ)। আজ জাস্ট ব্যাসিকটা বলি। তো যা বলছিলাম। ডোমেইন হল নাম। এই যেমন: facebook.com, stechbd.net এই নামগুলোই হল ডোমেইন। আর, একটা ওয়েবসাইটে ঢুকলে যা যা দেখেন সব মূলত কোন ওয়েব সার্ভারে রাখা ফাইল। যখন আমরা আমাদের ওয়েব ব্রাউজারে কোন ওয়েব এড্রেস লিখি, যেমন: google.com তখন এটি ডোমেইন নেম সার্ভার থেকে google.com এর IP অনুসারে এটি কোন কম্পিউটারে আছে টা খুঁজে বের করে। তারপর সেখানে থাকা ফাইলগুলো শো করে। আমরা ফেসবুকে ঢুকলে নিল-সাদা যে একটা লগইন পেইজ দেখি তা মূলত একটি ফাইল। ফেসবুকের ক্ষেত্রে এই ফাইলটি পিএইচপি (PHP) দিয়ে লেখা। পিএইচপি মূলত লিনাক্স বেজড প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ (Linux Based Programming Language)। অর্থাৎ, ফেসবুকের সার্ভার লিনাক্স বেজড।
যাইহোক, এখন ফাইল নাহয় শো করল। আমরা তা ব্রাউজারে কিভাবে দেখি? আসলে সার্ভারকে যখন ব্রাউজার রিকোয়েস্ট পাঠায় যে অমুক ফাইলটা দেখাও, সার্ভার তখন সেই ফাইলটি (পারমিশন অনুযায়ী) রেসপন্স হিসেবে ব্রাউজারে পাঠায়। তবে সরাসরি পিএইচপি কোড পাঠায় না। সেটাকে এইচটিএমএল (HTML) নামক এক প্রকার মার্কআপ ল্যাঙ্গুয়েজে (Markup Language) কনভার্ট করে পাঠায়। কেননা পিএইচপি কোড যদি পাঠিয়েই দিত তাহলে তো আমরাও ফেসবুকের সব কোড (Code) কপি করে হুবহু এরকম একটা সাইট বানিয়ে ফেলতে পারতাম 😛
তবে, শুধু যে পিএইচপি দিয়েই করা যায় এমন না। ওয়েবসাইট চাইলে উইন্ডোজ (Windows) সার্ভারেও করা যায়। তখন নরমালি এএসপি (ASP) নামক ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করা হয়। নরমালি বলছি কারণ উইন্ডোজ সার্ভারেও পিএইচপি ব্যবহার করা যায়। তবে, বর্তমানে পিএইচপি সবচেয়ে জনপ্রিয়, সবচেয়ে পাওয়ারফুল এবং সবচেয়ে ভাল পারফরমেন্স পাওয়া যায়। আর লিনাক্স সার্ভার দামেও সস্তা 😜। ফলে আমার মত গরিব মানুষেরা লিনাক্স সার্ভার ব্যবহার করে 😝। এ কারণে এটার পপুলারিটিও বেশি। তবে, এ ছাড়াও আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ল্যাংগুয়েজ হল জাভাস্ক্রিপ্ট (JavaScript) যা মূলত ব্রাউজার সাইড ল্যাংগুয়েজ।
যাইহোক, ব্রাউজার এখন প্রাপ্ত রেসপন্স (এইচটিএমএল) অনুযায়ী ওয়েবপেইজটি শো করে। এভাবে অনেক অনেক জটিল প্রসেস পার করে ওয়েবপেইজ আমাদের সামনে এক মুহূর্তের মধ্যে হাজির হয়ে যায়। এই ওয়েবসাইটের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন এইচটিএমএল এর আবিষ্কারক ‘টিম বারনার্স লি‘। তার তৈরি এ অভিনব প্রযুক্তির মাধ্যমেই ওয়েব জগৎ এভাবে এগিয়ে গেছে।
অনেকে হয়তো এতক্ষণে শান্তি পেলেন ওয়েবসাইট সম্মন্ধে জানা হয়ে গেল। কিন্তু, আদতে আরও একটি টপিক নিয়ে আলোচনা প্রয়োজন। সেটা হল ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট। ডিজাইন শব্দ শুনেই নিশ্চই ধারণা করে ফেলেছেন এটা মূলত ওয়েবসাইট সাজানোর কাজে ব্যবহৃত হয়। হ্যাঁ, আপনার ধারণা ঠিক। ওয়েবসাইট দেখতে কেমন হবে? পেইজের কোথায় কি থাকবে? কিভাবে থাকবে? ইত্যাদি ঠিক করা হয় ওয়েব ডিজাইনে। আর ওয়েব ডেভেলপমেন্ট করা হয় ওয়েব প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ দিয়ে। এর কাজ হল সাইটে কখন কি কন্টেন্ট শো করবে, কোন ইউজারকে কি দেখাবে ইত্যাদি বিষয় সেট করে। তো এই হয়ে গেল ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্টের কিছু আলোচনা। এবার তবে ইতি টানতে হয়। পরবর্তীতে ওয়েবসাইট বিষয়ক অন্যান্য টপিকে বিস্তারিত আলোচনা হবে ইন শা আল্লাহ।
ওয়েবসাইট বিষয়ক প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট বক্স তো আছেই। যথাসম্ভব উত্তর দেয়ার চেষ্টা করব 😀