ব্ল্যাক হোল (Black Hole) নিয়ে আগ্রহ নেই এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া আসলে দুষ্কর। তবে বিষয়টা এতটা ছোট নয় যে একটি আর্টিকল লিখে তা জানিয়ে দেয়া সম্ভব। আর, এটার গাণিতিক বিশ্লেষণে গেলে ব্যাপারটা যে কতটা বড় হবে, তা বলাই বাহুল্য। তো শুরু করা যাক, কৃষ্ণ বিবরের বেসিক আলোচনা।
ব্ল্যাক হোল সম্মন্ধে শুরুতে বেসিক ধারণা নেয়া যাক। ব্ল্যাক হোল হল মহাবিশ্বের এমন এক জায়গা যেখানে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি এতটাই তীব্র যে সেখান থেকে অন্যকিছু তো দূরে থাক খোদ মহাবিশ্বের সবচেয়ে গতিশীল কণা তথা আলোও বেরোতে পারে না! শুধু তাই নয়, এই ব্ল্যাক হোলের ভেতরে সময়ও এই তীব্র মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কাছে হার মেনে থেমে যায়! ফলে কেউ যদি একবার ব্ল্যাক হোলে পতিত হয়, তার ক্ষেত্রে দুটো ঘটনা ঘটবে:
১. সে কখনোই বেরোতে পারবে না।
২. তার জন্য সময় স্থির হয়ে যাবে। অর্থাৎ তার বয়স বাড়বে না। আজীবন একই বয়সে থাকবে।
তাই ব্ল্যাক হোলের আশেপাশে ঘোরাঘুরি থেকে বিরত থাকবেন 😜
যাইহোক, ব্ল্যাক হোলের এই কিউট নামটা দিয়েছেন পদার্থবিজ্ঞানী জন হুইলার। তিনি ১৯৬৯ সালে এই নামটি দিয়েছেন। তবে ব্ল্যাক হোল বললেই সবার চোখে পদার্থবিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন এবং স্টিফেন হকিংয়ের কথা মাথায় আসে।
বিজ্ঞানী আইনস্টাইন তার আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্বে (General Theory of Relativity) হিসাব কষে দেখান যে, ব্ল্যাক হোল থাকবে এই মহাবিশ্বে। পাশাপাশি তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংও তার জীবনে ব্ল্যাক হোল নিয়ে অনেক কাজ করেছেন। তবে দুঃখের বিষয়, ব্ল্যাক হোলের ছবি উনি দেখে যেতে পারলেন না। তা প্রকাশের বছর খানেক আগেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
১০ এপ্রিল ২০১৯ সালে ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ (EHT) দ্বারা প্রকাশিত হয় প্রথমবারের মতো ব্ল্যাক হোলের ছবি।
তবে ব্ল্যাক হোল নিয়ে ধারণা বেশ পুরোনো। প্রায় ২০০ বছর যাবৎ এটি নিয়ে চিন্তা হয়েছে। ব্ল্যাক হোল বুঝতে হলে সবার আগে জানতে হবে আলো কি তরঙ্গ নাকি কণা?
মূলত এ বিষয়টা নিয়ে বিজ্ঞানীরা একটা সময় দুই দলে বিভক্ত ছিল। একদল দাবি করতো আলো এক প্রকারের তরঙ্গ। অন্যদল দাবি করতো আলো এক প্রকারের কণা। দু’দলের কাছেই যথেষ্ট যুক্তি ছিল। পরবর্তীতে দেখা গেল আসলে দু’দলই ঠিক। আলো একই সাথে কণা ও তরঙ্গ দুটোই।
এখন আলো যদি কণা হয় তাহলে তার উপর মহাকর্ষের প্রভাব থাকাটা স্বাভাবিক। কেননা মহাকর্ষ সকল কণাকেই আকর্ষণ করছে। কিন্তু শুরুতে সবার কাছে আলোর বেগ সম্মন্ধে স্পষ্ট ধারণা ছিল না। সবার ভাবতো আলোর বেগ অসীম। তাই মহাকর্ষ বল আলোর উপর প্রভাব খাটাতে পারে না। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেল, আলোর বেগ সসীম। এবং সেটা প্রায় 3×10⁸ ms-1।
এবার বিজ্ঞানীরা নড়ে-চড়ে বসলেন। আলোর বেগ যেহেতু অসীম নয়, তাহলে এবার আলোকে আচ্ছামতো ধরাসাই করা যাবে মহাকর্ষ বলের মাধ্যমে 😉 ফলে এই ধারণার উপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠলো ব্ল্যাক হোল। যার মহাকর্ষ বল এতটাই তীব্র হবে যে সেখানে আলো তার এই বিপুল পরিমাণ বেগ নিয়েও হেরে যাবে এবং আটকে যাবে সেই অন্ধকার গর্তে!
আজ এ পর্যন্তই। আগামীকাল দ্বিতীয় ও শেষ পর্বে আমরা দ্য গ্রেট আলো মহাশয়কে পরাস্ত করবার মিশন।