ডার্ক ওয়েব: ইন্টারনেটের কালো জগৎ

গত পর্বে ডার্ক ওয়েব, ডীপ ওয়েব এবং সার্ফেস ওয়েব নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। আজকে স্পেশালি ডার্ক ওয়েব নিয়ে আলোচনা করব। যারা গত পর্ব মিস করেছেন তাদের জন্য ডার্ক ওয়েবের অংশটুকু দিচ্ছি।

ডার্ক ওয়েব

অনেকেই এটাকে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব (www) এর বাইরের কিছু মনে করে। এটা একটা মিথ। মূলত ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের কোন সার্ভারেই ডার্ক ওয়েবের অস্তিত্ব বিদ্যমান। ডার্ক ওয়েবে এমন কিছু কাজ হয়, যেসব সার্ফেস ওয়েবে করা হয় না। সাধারণত অবৈধ কাজ করার, অবৈধ সেবা নেয়ার, ফাঁসকৃত ডকুমেন্টস বেচাকেনার জায়গা এটা। কারণ ডার্ক ওয়েবে আপনার পরিচয় গোপন থাকছে 😉 আর, ক্রিপ্টোকারেন্সি খরচ করার সবচেয়ে ভালো জায়গা এই ডার্ক ওয়েব।

গত পর্ব পড়ে থাকলে জানার কথা, ডীপ ওয়েব কি। যেখানে সাধারণত সার্চ ইঞ্জিন ঢুকতে পারে না। এমনকি সব মানুষও না, যতক্ষণ না পর্যন্ত অ্যাকসেসের সুযোগ দেয়া হয়। মানে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত আরকি।

ডার্ক ওয়েবের মিথগুলো

১. এখানে গেলে ওয়াইফাই হ্যাক করা যায় (সিরিয়াসলি, অনেকে এটাই জানে 😂)।
২. কারো ফেসবুক একাউন্ট উড়িয়ে দেয়া যায় (😑)।
৩. ঢুকলেই পুলিশ ধরে নিয়ে যাবে।
৪. ডার্ক ওয়েব সাধারণ ওয়েব নেটওয়ার্কের বাইরে।

বোঝাই যাচ্ছে, উপরেরগুলো ভুল ধারণা। এমন কিছুই না। এমনকি ডার্ক ওয়েবে ঢোকা অপরাধও নয়, যতক্ষণ না আপনি কোন অবৈধ কিছু কেনা-বেচা বা গ্রহণ করেন।

ডার্ক ওয়েবে কিরকম অবৈধ কাজ হয়?

স্বাভাবিকভাবে যেগুলো করা বেশ বড় অপরাধের, সেগুলোই সেখানে করে সাধারণত। যেন ট্রেস না থাকে। যেসব কাজ ডার্ক ওয়েবে সাধারণত করা হয়:

১. অবৈধ পণ্য, মাদকদ্রব্য, অস্ত্র বিক্রি।
২. জঙ্গিবাদের কার্যক্রম।
৩. হ্যাকার ভাড়া করা।
৪. মুদ্রা আদান-প্রদান।
৫. ক্লোনিং, স্ক্যামিং।
৫. অবৈধ পর্নোগ্রাফি (+সেলেব্রিটিদের স্ক্যান্ডাল কেনা-বেচা 🐸)
৭. সোশ্যাল মিডিয়া (ফেসবুক ইনক্লুডেড 😎)
৮. রাষ্ট্রীয় বা আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ ফাইল কেন-বেচা।
ইত্যাদি

স্বাভাবিকভাবেই উপরের ৮ টি কাজের একটি কাজও আমাদের লাগার কথা না। তাই ডার্ক ওয়েবে ঢোকার প্রয়োজনীয়তাও আমাদের নেই। তারপরও নিজ আগ্রহে ঢুকলেও ভয়ের কিছু নেই। কেউ আপনাকে গ্রেফতার করবে না। এমনকি অবৈধ কাজ করলেও অনেক সিকিউরিটি পাবেন 😉

কিভাবে ঢুকবেন?

ডার্ক ওয়েবে ঢুকতে হলে আপনাকে টর বা আইটুপি ব্যবহার করতে পারেন। টর ব্রাউজার থেকে বিভিন্ন সাইটে যেতে পারেন। আমরা যেমন নরমালি .com/.net ইত্যাদি ডোমেইন ব্যবহার করি, এক্ষেত্রে সেটা .onion

ওখানে গুগলের বিকল্প হিসেবে আছে ডাকডাকগো। এটা একটা বেশ ভালো সার্চ ইঞ্জিন। কারণ গুগলের মত এটা আপনাকে সর্বাবস্থায় ট্রেস করবে না। তাই একটু হাফ ছেড়ে বাঁচবেন। আর, চাইলেই ডার্ক ওয়েবে ফেসবুক চালাতে পারবেন। আমি কখনো ডার্ক ওয়েব থেকে ফেসবুকে লগিন করি নি (দরকার পরে নি), এমনিই ঘুরে দেখেছি খালি।

আর হ্যাঁ, ডার্ক ওয়েবে ঢুকতে হলে আগেই একটা ভিপিএনে কানেক্ট করে নিবেন। ভিপিএন আবার কি? ভিপিএন হল ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক। খুব কাজের একটা জিনিস। অন্য একদিন তা নিয়ে আলোচনা হবে ইনশাআল্লাহ।

পড়ুন: ভিপিএন কি, কিভাবে কাজ করে এবং কেন ব্যবহার করব?

কথা হল ঢুকলাম, কিনলাম কিন্তু পেমেন্ট কিভাবে করব? হুম, ভালো প্রশ্ন। এত সিকিউরিটির মধ্যে দিয়ে কিনে নিশ্চয়ই ব্যাংকের চেকে পেমেন্ট করে নিজের পরিচয় ফাঁস করার মত দুঃসাহস দেখাবেন না। সেক্ষেত্রে আপনি ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করবেন স্বাভাবিকভাবেই। বিটকয়েন দিয়ে অনেক কেনাকাটা করতে পারেন।

ডার্ক ওয়েবের বিভিন্ন সাইটেই আলাদা এড্রেস আছে। সেগুলো নরমাল ওয়েবের মত সুন্দর শব্দে না, বরং র‍্যান্ডম লেটার দিয়ে তৈরি করা। যাতে না জেনে কেউ ঢুকতে না পারে। সাইটের নামগুলো দিয়ে ডার্ক ওয়েবে উৎসাহিত করলাম না 🙄 কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে জানান।

Md. Ashraful Alam Shemul
Md. Ashraful Alam Shemulhttps://www.STechBD.Net
শিমুল একজন প্রযুক্তিপ্রেমী ❤️ তিনি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও ধর্ম নিয়ে লেখালেখি করতে ভালোবাসেন।

সাম্প্রতিক লেখা

সম্পর্কিত লেখা