স্বপ্ন বা ড্রীম (Dream) মানুষের জন্য এক রহস্যময় ব্যাপার বললে ভুল হবে না। সেই প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ স্বপ্ন দেখে আসছে। বিজ্ঞান তৎকালীন সময়ে এতটা আগায় নি বলে, কেউ স্বপ্নের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম সম্মন্ধে কিছুই জানতে পারে নি। তবে বর্তমানে স্বপ্ন সম্মন্ধে অনেক কিছুই জানা সম্ভব হয়েছে।
স্বপ্ন কি?
স্বপ্ন হল মানুষের এক প্রকারের মানসিক অবস্থা, যা কিনা মানুষের অবচেতন মনে দ্বারা প্রভাবিত এবং পরিচালিত। অবচেতন মন ঘুমের মধ্যে কাল্পনিক কিছু ঘটনা প্রত্যক্ষ করে, যাকে স্বপ্ন বলা হয়। তবে যখন স্বপ্ন দেখা হয়, তখন দর্শকের নিকট এটি বাস্তব বলেই মনে হয়। স্বপ্ন সম্মন্ধে ধর্ম, বিজ্ঞান এবং দর্শনের বিভিন্ন ব্যাখ্যা রয়েছে। আজ আমরা শুধু বিজ্ঞানের ব্যাখ্যাই জানবো। স্বপ্ন সম্বন্ধীয় বিজ্ঞানকে স্বপ্নবিজ্ঞান বা অনেইরোলজি (Oneirology) বলে।
স্বপ্ন কখন দেখে?
স্বপ্ন সম্মন্ধে বিজ্ঞান এখনো খুব বেশি আগাতে পারে নি। ঘুমের দুইটি পর্যায় আছে। সেগুলো হল:
১. দ্রুত চক্ষু আন্দোলন বা র্যাপিড আই মুভমেন্ট (REM: Rapid Eye Movement) দশা
২. ধীর চক্ষু আন্দোলন বা নন-র্যাপিড আই মুভমেন্ট (Non-REM: Non-Rapid Eye Movement) দশা
কিছু স্বপ্নবিজ্ঞানীর মতে ঘুমের যে পর্যায়ে কেবল আক্ষিগোলক দ্রুত নড়াচড়া করে কিন্তু বাকি শরীর শিথিল (সাময়িকভাবে প্রায় পক্ষাঘাতগ্রস্ত) হয়ে যায় অর্থাৎ আরইএম দশায় মানুষ স্বপ্ন দেখে। তবে অনেক স্বপ্নবিজ্ঞানী এটা না মানায়, এটি বিতর্কিত।
স্বপ্ন কতক্ষণ দেখি?
কিছু স্বপ্নবিজ্ঞানীর ধারণা করতেন যে আমরা খুব অল্প সময়ই স্বপ্ন দেখি। সেটার দৈর্ঘ্য ২-৩ মিনিট। তবে বর্তমানে জানা গেছে আমরা সারারাতই স্বপ্ন দেখি। তবে এটার নির্দিষ্ট পরিমাপ নেই। কেউ কয়েক সেকেন্ড থেকে ঘণ্টা খানেক কিংবা পুরো রাতও স্বপ্ন দেখতে পারেন। তবে রাতের প্রথমভাগে অল্প কিছুক্ষণ স্বপ্ন দেখি। আরইএম পর্যায়ে এসে দীর্ঘক্ষণ স্বপ্ন দেখি।
মস্তিষ্কের দ্রুততা
প্রচলিত ধারণা আছে, স্বপ্ন যখন দেখি আমরা, তখন মস্তিস্ক দ্রুত কাজ করে। ফলে অল্প সময়ের স্বপ্নই আমাদের কাছে অনেক বড় হয়ে যায় এবং মনে হয় অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে। কিন্তু ধারণাটি ভুল। এটি আগে ধারণা করা হতো যখন কিনা ধরা হতো স্বপ্ন মাত্র কয়েক মিনিট স্থায়ী হয়। কিন্তু পরে দেখা গেল, স্বপ্নের সময়ের হিসেব বাস্তবের মতই।
স্বপ্ন মনে রাখা
স্বপ্ন মনে রাখা যায়। কিন্তু ৯০% অংশই মানুষ ভুলে যায়। তবে স্বপ্ন মনে রাখতে, অকস্মাৎ ঘুম ভেঙে যাওয়া রোধ করতে হবে। ধরা গেল সকালে এলার্মের তীব্র শব্দে হুট করে ঘুম ভেঙে গেল। সেক্ষেত্রে স্বপ্ন ভুলে যাবেন। কিন্তু যদি নিজে থেকে ঘুম ভাঙে তবে সেটা মনে থাকবে। সেক্ষেত্রেও কিছু কাজ আছে। ঘুম ভাঙলেই হুট করে উঠে যাওয়া যাবে না। একটু সময় দিতে হবে মস্তিস্ককে। তবে এসময় স্বপ্নের কথা মনে করার চেষ্টা করা যাবে না। চুপচাপ কিছুক্ষণ বসলে ধীরে ধীরে মনে আসবে।
স্বপ্নের রঙ
আগে ধারণা করা হতো স্বপ্ন শুধু সাদাকালো দেখা যায়। সেটা অবশ্য অনেক মানুষের ইপির পরীক্ষা করে দেখা গেছে। কিন্তু ১৯৬০ সালের পর আবার পরীক্ষা করে ভিন্ন ফলাফল পাওয়া গেল। এখন বেশিরভাগ মানুষকেই রঙিন স্বপ্ন দেখতে দেখা গেল। অনেকে এক্ষেত্রে রঙিন টেলিভিশনের আবিষ্কারকে এজন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে দাবী করছেন।
মানুষের চেহারা
মজার ব্যাপার হল, স্বপ্নে আপনার পরিচিত লোকদের দেখলেও আপনি কারো চেহারা দেখতে পাবেন না। চেহারা ব্ল্যাংক (Blank) থাকে। তবে তাদের সাথে কথাবার্তা থেকে শুরু করে সবই স্বাভাবিকভাবেই হবে।
স্বপ্নে মৃত্যু
স্বপ্ন যেহেতু বাস্তব জগতের ধ্যান-ধারণা থেকেই সৃষ্ট তাই মৃত্যুর পরের ঘটনা আমাদের মস্তিষ্কের কাছে থাকে না। গেলে আপনি যদি স্বপ্নে মারা যান, সেক্ষেত্রে মস্তিস্ক পরবর্তী অংশে কি দেখাবে সেটা বুঝে উঠতে পারে না বলে আপনি জেগে যাবেন। এটাই স্বপ্নে মৃত্যু দেখলে যা হবে তার এখন পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক পূর্বাভাস।
আজ এ পর্যন্তই। Keep learning 😀