গত পর্বের পর সকলেই এ বিষয়টা নিয়ে খুব আগ্রহী। অনেকেই এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিয়েছেন। হ্যাঁ, রিকভার করা যায়। কিন্তু কেন? আমি তো ডিলিট করলাম ফাইল, তাও রিকভার হবে কিভাবে? সে আলোচনাই আজ হবে। তবে সেজন্য আগের পর্বটা পড়ে আসতেই হবে।
সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ – স্পয়লার অ্যালার্ট
এটা দ্বিতীয় পর্ব। প্রথম পর্ব না পড়ে আসলে এটা বুঝবেন না। কারণ রিভিউ থাকছে না। আর, দ্বিতীয় পর্বের পর প্রথম পর্ব পড়লে মজাই পাবেন না। তাই অনুরোধ করছি, শুরুতেই আগের পর্ব পড়ে আসুন। তারপর নাহয় এই পর্ব পড়বেন 😀
প্রথম পর্বের আর্টিকলের লিংক: মেমরি কার্ড বা হার্ড ড্রাইভ থেকে ডিলিট হওয়া ফাইল কোথায় যায়?
পড়া শেষ? তো শুরু করা যাক। আগের পর্ব থেকে এটুকু ক্লিয়ার যে কিভাবে নতুন ফাইল আসলে পয়েন্টারহীন স্পেসগুলোতে নতুন ডেটা বসে। তো, কথা হল ধরে নিলাম এখন একটি ফাইল ডিলিট করলাম এবং নতুন ফাইল যুক্ত করলাম না। অর্থাৎ তথাকথিত খালি জায়গায় অন্য কোন ডেটা বসালাম না। সেক্ষেত্রে কি সেই ফাইলটি রিকভার করতে পারব? কেননা সেই জায়গা তো নতুন কোন ডেটা দ্বারা রিপ্লেসড না।
জ্বী অবশ্যই! এভাবে করে আপনি সহজেই (পড়ুন মোটামুটি সহজেই 😐) আপনার দরকারি ফাইল পুনরুদ্ধার করতে পারবেন। আসলে ব্যাপারটা আমিও আগে জানতাম না। কয়েকবছর আগে যখন এক ভাই লিনাক্স কমান্ডের সাহায্যে পুরো হার্ড ডিস্ক ফাঁকা করে রিকভার করেছিলেন। তখনই জানলাম যে এগুলো করা যায়। যদিও কম্প্রেসড ফাইল বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই করাপ্ট হয়ে যায়। অডিও, ভিডিও মোটামুটি অক্ষত থাকে। কম্প্রেসড ফাইল কেন হয় না? কারণ ঐখানের সামান্য কয়েকটা বিট এদিক ওদিক হলেই ফাইলটা করাপ্ট হয়ে যায় বা কাজ করে না। সেজন্য সফটওয়্যার এবং অন্যান্য জিনিসের ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। তবে অডিও বা ভিডিওর মত জিনিসে কিছু বিট এদিক সেদিক হলে সমস্যা হয় না।
এটা বোঝার জন্য একটা ভালো উদাহরণ দেই। ধরুন একটা কম্প্রেসড ফাইল (ধরলাম অ্যান্ড্রয়েডের এপিকে ফাইল) অর্ধেক ডাউনলোড করলেন এবং ইনস্টলের চেষ্টা করলেন। আদৌ হবে কি? অসম্ভব, কখনোই হবে না। অন্যদিকে একটি অডিও বা ভিডিও অর্ধেকের মত ডাউনলোড করলে যতটুকু ডাউনলোড করবেন, শুনতে বা দেখতে পারবেন (মাল্টিপল কানেকশনের ক্ষেত্রে হিসাব আলাদা)। বিশ্বাস না হলে আজই চেষ্টা করে দেখুন।
যাইহোক, এত গভীরে গেলে আলোচনা শেষ হতে আজীবন লাগবে। আবার আগের জায়গায় ফিরে আসি। কথা হল, সম্পূর্ণ সহীহ-সালামতে কেন সব ফাইল ফিরিয়ে আনা যায় না? কারণ আপনার ফাইল ডিলিট হয়ে গেলে যেহেতু আপনার ফাইলের পয়েন্টারগুলো দূর হয়ে যাচ্ছে তাই বোঝাই কষ্টকর হয়ে যায় যে কোন কোন বিট মিলে ডিলিট করা ফাইলটি গঠিত ছিল। ধরুন আগে আপনার কাছে চাল, ডাল, মশলা ছিল। তিনটিই ডিলিট করে দেয়ার পর সব মিলিয়ে খিচুড়ি হয়ে যায়। সেখান থেকে চাল, ডাল, মশলা আলাদা করা খানিকটা কষ্টের বটে। কিন্তু এই কষ্টের কাজগুলোও নিরলসভাবে করে যায় ডেটা রিকভারির কিছু সফটওয়্যার। তাদের জন্য রইল বিনম্র শ্রদ্ধা (😜)।
এখন কথা হল, আপনার ফাইল সিস্টেমের উপর ডিপেন্ড করবে যে কতটা ফাইল উদ্ধার করা যাবে। উদাহরণ স্বরূপ উইন্ডোজ এনটিএফএস বা NTFS ফাইল সিস্টেম কোন ফাইল ডিলিট হওয়ার পরেও সেই ফাইলটির পয়েন্টারের তথ্য সংরক্ষিত রাখে। ফলশ্রুতিতে যেকোনো রিকভারি সফটওয়্যারের কাছে ফাইলটি খুঁজে পাওয়া অনেক সুবিধাজনক হয়ে যায়। অন্যান্য ফাইল সিস্টেম যেমন- ইউটিএফ বা UTF অথবা এফএটি বা FAT কোন ফাইল ডিলিট হওয়ার সাথে সাথে তার পয়েন্টারের তথ্যকেও মুছে দেয়। ফলশ্রুতিতে রিকভারি সফটওয়্যারের কাছে ফাইলটি খুঁজে পাওয়া অনেক কঠিন হয়ে উঠে।
সবার নজর এখন শেষ প্রশ্নে, ভাই কোন রিকভারি সফটওয়্যার ব্যবহার করব? মূলত অনেক অনেক সফটওয়্যার আছে। যার মধ্যে কিছু ফ্রি এবং কিছু পেইড। বোঝায় যাচ্ছে, পেইডগুলোর ফিচার বেশি হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে আপনি যদি আমার মত সাধারণ মানুষ হয়ে থাকেন, তবে ফ্রিতেই চলবে। কোথায় পাবেন এসব? গুগল করবেন ‘Free Data Recovery Software for Windows 64 Bit‘ (আপনার পিসি ৩২ বিটের হলে 32 Bit লিখবেন)। যেটা ভালো লাগে, ব্যবহার করবেন। একান্তই খুঁজে না পেলে জানাবেন।
আজ এ পর্যন্তই। যদি প্রশ্ন থাকে কোন তাহলে কমেন্টে জানাতে পারেন। কিংবা পোস্টদ্বয় নিয়ে মন্তব্য থাকলে সেটাও জানাবেন। পরবর্তী পোস্ট সম্ভবত আইপি অ্যাড্রেস কিংবা ভিপিএন নিয়ে হতে পারে। আপনাদের কাছে প্রযুক্তি বিষয়ক কোন প্রশ্ন থাকলে সাজেস্ট করতে পারেন। উত্তর জানা থাকলে সেটা নিয়ে আর্টিকল লিখব ইন শা আল্লাহ।