গত দুই পর্বে আমরা কৃষ্ণ বিবর বা ব্ল্যাক হোল সম্মন্ধে পড়েছিলাম। এবার আমরা জানবো শ্বেত বিবর বা হোয়াইট হোল (White Hole) নিয়ে। নাম দেখেই নিশ্চয়ই বলে দেয়া যায়, হোয়াইট হোল হবে ব্ল্যাক হোলের একদম উল্টো, তাইনা?
আসলেই তাই। ব্ল্যাক হোলের যে ধারণা, সেই ধারণা থেকেই জন্ম নিয়েছে হোয়াইট হোলের ধারণাটি। ব্যাক হোলের ক্ষেত্রে আমরা দেখি, তা থেকে কোন কিছুই এমনকি আলোও বেরোতে পারে না। তা হারিয়ে যায় ব্ল্যাক হোলের ভেতরে। কিন্তু হোয়াইট হোলের ক্ষেত্রে উল্টো বিষয় ঘটবে। অর্থাৎ হোয়াইট হোলের ভেতর থেকে সব বেরিয়ে যাবে। কোন কিছুই এমনকি শক্তিও ঢুকতে পারবে না। ফলে, হোয়াইট হোল দেখতে সাদা হবে। কেননা সকল আলো বেরিয়ে যাবে।
হোয়াইট হোলের ধারণার সূত্রপাত
মহাবিশ্বে ব্ল্যাক হোলের অস্তিত্ব থাকলে হোয়াইট হোলের অস্তিত্বও থাকা উচিত। কেননা যদি ধরে নিই ব্ল্যাক হোল সমস্ত কিছু টেনে নিচ্ছে, তবে এখানে প্রশ্ন উঠেই যায়, সব কিছু কোথায় যাবে। কেননা ব্ল্যাক হোল তো অসীম ভরের কিংবা অসীম পরিমাণ জায়গা দখল করে নেই। তাই ব্ল্যাক হোলে পতিত বস্তুগুলো বেরোনোর জন্য একটা পথ দরকার। তাত্বিক পদার্থবিজ্ঞানীরা সেটাকেই হোয়াইট হোল হিসেবে অভিহিত করেছেন।
হোয়াইট হোলের সম্ভাব্যতা
হোয়াইট হোল থাকার সবচেয়ে বড় সম্ভাব্যতা হল আইনস্টাইনের অপেক্ষয়তার সার্বিক তত্ত্ব। সার্বিক তত্ত্বের সূত্রগুলোর সমাধান থেকে হোয়াইট হোলের ধারণা এসেছে। পরবর্তীতে এ নিয়ে হয়েছে বিস্তর গবেষণা। শুরুতে কেউ হোয়াইট হোলের ধারণাকে পাত্তা না দিলেও ‘লুপ কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটি’ তত্ত্বের ভিত্তিতে হোয়াইট হোল থাকার বেশ সম্ভাবনা আছে।
হোয়াইট হোলের জন্ম
হোয়াইট হোলের জন্ম ব্ল্যাক হোল থেকেই হয় বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা। বিজ্ঞানীরা মনে করে একসময় ব্ল্যাক হোল নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। তখন তার ভিতরে থাকা বস্তুগুলো বের করে দেবে। সেটাই তখন হয়ে যাবে হোয়াইট হোল। অর্থাৎ ব্ল্যাক হোল নিজেই নিজের উল্টো চরিত্র প্রদর্শন করে হোয়াইট হোল হয়ে যাবে। তবে এগুলো এখন পর্যন্ত ধারণা মাত্র। গবেষণা চলছে। একসময় আমরা বিস্তারিত জানতে পারব।
ঘটনা দিগন্ত বা ইভেন্ট হরাইজন (Event Horizon)
মনে আছে আমরা ব্ল্যাক হোলের ঘটনা দিগন্ত পড়েছিলাম? তেমনি হোয়াইট হোলেরও ঘটনা দিগন্ত আছে। ব্ল্যাক হোলের ইভেন্ট হরাইজন থেকেই যেমন তার মূল শক্তি শুরু, হোয়াইট হোলের ক্ষেত্রেও একই। হোয়াইট হোলের ইভেন্ট হরাইজন পাড় হওয়া কোন কিছুর পক্ষেই সম্ভব না। ইভেন্ট হরাইজন থেকেই সে সমস্ত কিছু বের করে দেয়।
বিগ ব্যাং ও হোয়াইট হোল
মহাবিস্ফোরন বা বিগ ব্যাং (Big Bang) কে যদি ছোট করে বলি তাহলে তা হল, মহাবিশ্ব একটি বিন্দু বা সিঙ্গুলারিটি (Singularity) থেকে তৈরি হয়েছে। সেই বিন্দুটি অসীম ভরের। সেই বিন্দুর বিস্ফোরণের মাধ্যমেই সম্প্রসারিত এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি। ফলে এই বিস্ফোরণ দ্বারাই হোয়াইট হোল তত্ত্বকে দাঁড় করানো সম্ভব হচ্ছে।
হোয়াইট হোল ভ্রমণ
গত পর্বের মত আবারও আমরা ট্যুর দিতে যাচ্ছি। তবে এবারও বাসা থেকে না বের হয়েই মনে মনে ট্যুর দিব আমার 😛। ট্যুরে যেতে হপে একটু কল্পনাশক্তির ব্যবহার প্রয়োজন। তো চলুন, শুরু করি।
ধরুন, আপনি হোয়াইট হোলে আছেন কোনভাবে। এখন হোয়াইট হোল আপনাকে স্থান দিতে নারাজ। আপনাকে যে করেই হোক বের করে দিবে। কিন্তু এখানেই মজার ব্যাপার। যদি বের করে দেয়, হতে পারে আপনি এই মহাবিশ্বের বাইরে অন্য কোন মহাবিশ্বে চলে যাবেন 😱। ওই অবাক হচ্ছেন? অবাক হওয়ার মত হলেও, কিছু বিজ্ঞানী এমনটা ভাবেন। তবে সকলে এই যুক্তির পক্ষে না।
তবে তাদের মধ্যে একটা অংশই মনে করেন, হোয়াইট হোল আপনাকে বের করে দেয়ার সময় অন্য যেকোনো সময়ে ছুড়ে ফেলতে পারে। মানে, টাইম ট্রাভেলের মত আরকি!
তবে আপনার জন্য সমবেদনা জানাচ্ছি। কেননা ধারণা করা হয়, হোয়াইট হোল বস্তুকে বের করার সময় বিভিন্ন জায়গায় ও সময়ে ফেলে দেয়। হতে পারে আপনার শরীরের একেক টুকরো একেক জায়গায় ও সময়ে চলে গেল 😱! এরকম মজার অনেক ঘটনাই সম্ভব হোয়াইট হোলে।