চাঁদে জমি কিনে বাড়ি বানান এখনই! স্বল্প মূল্যে চাঁদে জমি কিনুন!

“চাঁদে জমি কিনে বাড়ি বানান এখনই! স্বল্প মূল্যে চাঁদে জমি কিনুন!”-শিরোনাম দেখে নিশ্চয়ই ভাবছেন, এ-ও সম্ভব! অবশ্যই সম্ভব। তবে অর্ধেকটা। চাঁদে জমি কিনতে পারবেন ঠিকই, বাড়ি কোন বছর বানাতে পারবেন কে জানে! আসলে শিরোনামটা ব্যাঙ্গাত্মকভাবেই লেখা। মূলত সামনে এসে পরা এত এত খবর দেখে আর না লিখেও পারলাম না।

চলুন কিছু সংবাদের শিরোনাম দেখে নিই।

  • চাঁদে জমি কিনলেন বাংলাদেশি দুই তরুণ!
  • স্ত্রীকে চাঁদে জমি দিলেন খুলনার অসীম!
  • এবার চাঁদে জমি কিনলেন সিলেটের সুজন!

এইতো গেল বাংলাদেশের খবর। এবার দেখি প্রতিবেশী দেশ ভারতের কি অবস্থা।

  • চাঁদে জমি কেনা প্রথম বলিউড স্টার ছিলেন সুশান্ত!

এখানেই শেষ নয়। তালিকায় আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যক্তিরাও।

  • চাঁদে জমি কিনেছেন আমেরিকার তিন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ, জিমি কার্টার এবং রোনাল্ড রেগন!

এতকিছুর পরও নিশ্চয়ই আর চিন্তা নেই। তাহলে এখনই কিনে ফেলুন জমি। কিন্তু কথা হল জমি তো কেনা হল, বাড়ি করবেন কিভাবে? তেমন কিছু না, স্পেসএক্সের থেকে রকেট ভাড়া করলেন নাহয়। তারপর পরিবার এবং শ্রমিক নিয়ে চলে গেলেন চাঁদে ট্যুর দিতে। খুবই সহজ কাজ।

চাঁদে জমি বিক্রি করছে কারা?

না, হলিউড মুভির মত এই ক্ষেত্রে ন্যাসার (ন্যাসা হল আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান) হাত নেই। চাঁদের জমি বিক্রি করেন ডেনিস হোপ নামের একজন আমেরিকান ভদ্রলোক। তার মালিকানাধীন প্রতি একর জমির দাম শুরু ২৫ ডলার থেকে। যা কিনা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২,১৩১ টাকা (আজকের দাম অনুসারে)। যাকে বলে পানির দামে জমি কেনা আরকি! আপনার আগ্রহ আছে? তাহলে আজই নাহয় কিনে ফেলুন। তবে দায়ভার কিন্তু আমি নিচ্ছি না।

চাঁদে কি আসলেই জমি কেনা যায়?

জাতিসংঘের উদ্যোগে ১৯৬৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্য ‘আউটার স্পেস ট্রিটি’ নামের এক চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। ওই চুক্তিতে বলা হয়, কোনো নির্দিষ্ট দেশ চাঁদসহ মহাকাশের অন্যান্য গ্রহ-উপগ্রহের সার্বভৌমত্ব বা মালিকানা দাবি কিংবা কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। চুক্তিটিকে মহাকাশের ‘ম্যাগনাকার্টা’ হিসেবে অভিহিত করেন অনেকে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ১১১টি দেশ এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তির কারণেই কোন দেশ চাঁদের বুকে পতাকা উড়িয়ে চাঁদের মালিকানা দাবি করতে পারে না। নাহলে এতদিনে হয়ত চাঁদ নিয়ে পরাশক্তিগুলোর মধ্যে যুদ্ধ বেঁধে যেত।

তবে এই চুক্তিতে আছে একটু ফাঁকফোকর। ১৯৬৭ সালের এই চুক্তিতে চাঁদের ভূমির ওপর রাষ্ট্রীয় অধিকার নিয়ে বলা হলেও ব্যক্তিগত ও করপোরেট অধিকার নিয়ে কিছু বলা হয়নি। ফলে আসলেই যদি ধনী কোনো ব্যক্তি চাঁদের বুকে একখণ্ড জমি কিনতে চায়, তার বেলায় কী হবে, সেই প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়। এমনকি আইনে বিশেষজ্ঞরাও পড়ে গেছেন চিন্তায়। তাই আপাতত কেউ চাঁদকে নিজের সম্পত্তি দাবী করলে, উড়িয়ে দেয়ার অবকাশ নেই।

চাঁদে জমি কেনার ভবিষ্যৎ কি?

আসলে চাঁদে জমি কেনাটাকে আপাতত মজা হিসেবেই নিন। প্রথমত আপনার জীবদ্দশায় আপনি চাঁদে যেতে পারবেন না। দ্বিতীয়ত, গেলেও সেখানে বায়ুমণ্ডলের অভাবে থাকতে পারবেন না। তাই বিষয়টা একটা ফান ফ্যাক্ট হিসেবেই থাকবে। আর, চাঁদে সত্যিই আপনার জমি হয়ে যাবে, মাত্র দু’হাজার টাকায় এটাও ভাবা বোকামি। দু’হাজার দিয়ে আপাতত একটা দলিল এবং জায়গার ম্যাপই নাহয় নিন।

Md. Ashraful Alam Shemul
Md. Ashraful Alam Shemulhttps://www.STechBD.Net
শিমুল একজন প্রযুক্তিপ্রেমী ❤️ তিনি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও ধর্ম নিয়ে লেখালেখি করতে ভালোবাসেন।

সাম্প্রতিক লেখা

সম্পর্কিত লেখা